ঢাকা , শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫ , ১৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯২৮ মাদক থেকে পরিত্রাণের মাধ্যম হতে পারে খেলাধুলা- বাণিজ্য উপদেষ্টা নারীর স্বাস্থ্য ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিতেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভবÑ পরিবেশ উপদেষ্টা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসায় শিশুসহ ৭ জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট সাতক্ষীরা তালায় অগ্নিকাণ্ডে ৮ দোকান পুড়ে ছাই চট্টগ্রামে স্টেডিয়ামে ‘জয় বাংলা’ সেøাগান ঘিরে হাতাহাতি, আটক ৬ রাজধানীতে শিশু অপহরণের হোতাসহ গ্রেফতার ৩ ববি হাজ্জাজে ছন্দপতন বিএনপিতে মোবারকে ফুরফুরে জামায়াত সুন্দরগঞ্জে শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়ায় সেই যুবকের মৃত্যু ফেনীতে অপহরণের ৬ বছর পর মিললো কাস্টমস কর্মকর্তার লাশ চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচন স্থগিত স্বেচ্ছায় জুলাই গেজেট থেকে নাম প্রত্যাহার আবেদন জুলাইযোদ্ধার ৩ ব্যাংক হিসাব ও কম্পিউটার জব্দ এনসিটি ইজারাদানের বিরুদ্ধে বাড়ছে তীব্রআন্দোলনের শঙ্কা মাউশি ডিজি নিয়োগে সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত আ’লীগ জামায়াতপন্থী আট প্রার্থী ইসির প্রতীক তালিকায় ‘শাপলা কলি’, প্রত্যাখ্যান এনসিপির ইসির প্রতীকের তালিকায় যুক্ত ‘শাপলা কলি’ রাজধানীতে সেনা অভিযানে কিশোর গ্যাং পাটালি গ্রুপের ১০ সদস্য আটক নভেম্বরে গণভোট, সংশোধিত আরপিও বহাল চায় জামায়তসহ ৮ দল গণভোট ঘিরে সামাজিকমাধ্যমে ‘হ্যাঁ-না’ ক্যাম্পেইন

এনসিটি ইজারাদানের বিরুদ্ধে বাড়ছে তীব্রআন্দোলনের শঙ্কা

  • আপলোড সময় : ৩১-১০-২০২৫ ০২:৫০:০৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ৩১-১০-২০২৫ ০২:৫০:০৬ অপরাহ্ন
এনসিটি ইজারাদানের বিরুদ্ধে বাড়ছে তীব্রআন্দোলনের শঙ্কা
নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)বিতর্কিত বিদেশি ডিপি ওয়ার্ল্ড কোম্পানিকে ইজারাদানের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনের শঙ্কা বাড়ছে। ইতিমধ্যেশ্রমিক-কর্মচারী সংগঠনসমূহক্ষোভ-অসন্তোষে ফুঁসে উঠেছে। মানববন্ধও বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে শ্রমিক-কর্মচারীদের পক্ষ থেকেইজারার প্রতিবাদে গণঅনশন কর্মসূচিরডাক দেয়া হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে কঠোরতর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা আসতে পারে। কারণ দেশের প্রধান চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে লাভজনক স্থাপনা এনসিটি বিনাকারণে বিদেশিদের তুলে দেয়া বন্দরের কোনো শ্রমিক-কর্মচারীই চাচ্ছে না। পাশাপাশি দেশপ্রেমিক নাগরিকরাও এর বিরুদ্ধে। কিন্তু অন্তর্বতীকালীন সরকার নেপথ্যে দুবাইভিত্তিক বিদেশি কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে ২৫ বছরের ইজারা প্রদানের লক্ষ্যে চুক্তির তোড়জোড় প্রস্তুতি চালাচ্ছে। অথচ চট্টগ্রাম বন্দরকে বলা হয় দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি এবং হৃৎপিণ্ড। আর দেশের প্রধান ওই সমুদ্র বন্দরের হৃৎপিণ্ড হচ্ছে নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)। চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালটি (এনসিটি)নির্মিত হয়েছেচট্টগ্রাম বন্দরের মুনাফা বাবদ নিজস্ব আয় দ্বারা। বন্দরের নিজস্ব টাকায় এনসিটিসর্বাধুনিক ভারী যন্ত্রপাতি (ইকুইপমেন্টস) দ্বারা সুসজ্জিত। সেখানে সরকারি কোনো রাজস্ব ব্যয় হয়নি। গত প্রায় ১৬ বছর যাবত চট্টগ্রাম বন্দরের আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ এককভাবে যোগান দিচ্ছেএনসিটি। মোট কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ৪৪ শতাংশই এনসিটিসামাল দিচ্ছে। এনসিটি দ্বারাই গৌরবের আসনে চট্টগ্রাম বন্দর। বর্তমানে বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত প্রতিষ্ঠান চিটাগাং ড্রাইডক লিমিটেডের মাধ্যমেএনসিটিপরিচালিত হচ্ছে। এনসিটিতে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ইতোমধ্যে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আমদানি-রফতানিকারক, ব্যবসায়ী, বন্দর ব্যবহারকারীরাও (স্টেক হোল্ডারগণ) বর্তমানে এনসিটির পারফরমেন্সে সন্তুষ্ট। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও বলছে বর্তমানে ড্রাইডকের মাধ্যমে এনসিটি দক্ষ ও সুশৃঙ্খল পরিচালনা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, নিউমুরিং টার্মিনাল (এনসিটি)নির্মিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) মুনাফায় সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ২ হাজার কোটি টাকায়। এনসিটিতে ব্যবহৃত সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামাদি (ইকুইপমেন্টস) সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এনসিটিতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকাব্যয় হয়েছে এবং এটি স্বয়ংসম্পূর্ণ, লাভজনক ও সক্ষমতাসম্পন্ন স্থাপনা। এনসিটিতে গ্যানট্রি ক্রেন, রীচ স্টেকার, স্ট্র্যাডেল ক্যারিয়ারের মতো ইকুইপমেন্টস প্রয়োজনের চেয়ে বেশিই রয়েছে। যে পরিমাণ যান্ত্রিক সরঞ্জাম আছে তা দিয়ে আগামী ১৫ বছর অনায়াসেই এনসিটি পরিচালনা করা সম্ভব। পাশাপাশি দেশেইদক্ষ-অভিজ্ঞ জনবলও রয়েছে। কিন্তু ইজারার মাধ্যমে বাংলাদেশের টাকায় সুপার স্ট্রাকচার-সমৃদ্ধ রেডি বন্দর এনসিটি ডিপি ওয়ার্ল্ডচালাবে। অথচ এনসিটিতে বছরে প্রায় ১৫ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বলহয়ে উঠেছে। তাতে বন্দরের রাজস্ব আয়ওবাড়বে। বর্তমানে এনসিটিতে নতুন করে বিনিয়োগের আর কোনো অবকাশ বা প্রয়োজন নেই। যদিও মাঝখানে প্রায় তিন মাস তীব্র শ্রমিক-রাজনৈতিক বিক্ষোভ, প্রতিবাদী আন্দোলনের মুখে সরকারের এনসিটি ইজারার দেয়ার উদ্যোগ অনেকটাই চাপা পড়ে গিয়েছিলো। কিন্তু ডিপি ওয়ার্ল্ডকে এনসিটি ইজারাদানে নতুন করে ফাইল চালাচালি, বন্দর এলাকায় মিছিল-মিটিং-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে চুক্তির তোড়জোড় শুরু হতেই শ্রমিক-রাজনৈতিক অঙ্গনে ও নাগরিক মহলেনিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বাঁচাতে আন্দোলনের উত্তাপ-উত্তেজনা ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠেছে। আন্দোলনকারীদের মতে, চট্টগ্রাম বন্দরের ধারাবাহিকভাবে লাভজনক মূল স্থাপনা এনসিটি হাতছাড়া করা হবে আত্মঘাতী।
সূত্র আরো জানায়, চলতি বছরের আগস্টে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং এক মাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক কন্টেইনার ওঠানামার রেকর্ড হয়। টার্মিনালটির পরিচালনার দায়িত্ব নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লি. (সিডিডিএল) হাতে নেয়ার মাত্র দুই মাসের মাথায় ওই রেকর্ড হয়েছে। আগস্টে এনসিটির ৪টি জেটি ব্যবহার করে জাহাজ থেকে এক লাখ ২২ হাজার ৫১৭ একক কন্টেটইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। মাসভিত্তিক কন্টেইনার ওঠানামার ওই সংখ্যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড। তার আগে ছিল গত জানুয়ারিতে। জানুয়ারিতে ওই টার্মিনালে হ্যান্ডলিং এক লাখ ১৮ হাজার একক কন্টেইনারকরা হয়। গত বছর আগস্টে এনসিটিতে ৯৬ হাজারকন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল। ওই হিসাবে গত বছরের আগস্টের তুলনায় গেল আগস্টে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং প্রায় ২৭ শতাংশ বেড়েছে। ড্রাইডক লি. এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর টার্মিনালটি সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। টার্মিনালে জাহাজের গড় অবস্থান সময়ও কমে এসেছে। সাশ্রয় হচ্ছে সময় ও আর্থিক। ফলে এনসিটিতে বছরে প্রায় ১৫ লাখ একক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর এবং শিপিংখাত সংশ্লিষ্টদের মতে, চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি সুপার স্ট্রাকচার-সমৃদ্ধ আন্তর্জাতিকমানের টার্মিনাল। সর্বাাধুনিক কন্টেইনার স্থাপনা এনসিটি ৯৫০ মিটার দীর্ঘ টার্মিনাল। এনসিটির বার্থে একত্রে চারটি সমুদ্রগামী কন্টেইনার জাহাজ এবং একটি ছোট জাহাজ ভিড়ানো যায়। গতবছর ২০২৪ সালে বন্দরের মোট কন্টেইনারের ৪৪ শতাংশ হ্যান্ডলিং করা হয় এবং বন্দরের মোট আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশই এনসিটি থেকেইআসে। জাহাজ থেকে ইয়ার্ডে কিংবা ইয়ার্ড থেকে জাহাজে কন্টেইনার ওঠা-নামার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয়, অত্যাধুনিক, দামি সরঞ্জাম গ্যানট্রি ক্রেন এনসিটিতে চাহিদা বর্তমানে ১২টি। অথচ সেখানে ১৪টিওই ইকুইপমেন্ট রয়েছে। পুরোপুরি সক্ষম ও স্বয়ংসম্পূর্ণ এনসিটি বিদেশি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাছাড়া এনসিটি আর সমপ্রসারণের কোনো সুযোগ নেই। তবে চট্টগ্রাম বন্দর সমপ্রসারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় প্রকল্প বে-টার্মিনাল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, লালদিয়ার চর টার্মিনাল বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশি অপারেটরকে ছেড়ে দিতে পারে সরকার। সেখানে জেটি-বার্থ নির্মাণসহ বিদেশি বিনিয়োগ এবং সুপার স্ট্রাকচার উন্নয়নের অনেক সুযোগই অধরা রয়েছে।
অন্যদিকে সম্প্রতি এক সেমিনারে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ ইফসুফ জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি, লালদিয়ার চর টার্মিনাল এবং ঢাকার কেরাণীগঞ্জের পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কন্টেনার টার্মিনাল পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটরদের সঙ্গে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন করা হবে। তার মধ্যে লালদিয়ার চর টার্মিনালে পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হবে ৩০ বছরের জন্য এবং এনসিটি ও পানগাঁও টার্মিনাল পরিচালনার মেয়াদ হবে ২৫ বছর। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে একটা চুক্তিতে পৌঁছানো হবে। বিদেশি অপারেটরের সুবিধার জন্য আগেভাগে চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ একলাফে ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ